বইপত্র ডাক দিয়ে যায় ছেলেবেলা
বইপত্র
ডাক দিয়ে যায় ছেলেবেলা
হে বৃদ্ধ সময়—সৈয়দ শামসুল হক
প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, অলংকরণ: শাহ্জাহান আহ্মেদ বিকাশ, প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৯৬ পৃষ্ঠা, দাম: ২০০ টাকা।
হে বৃদ্ধ সময় সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনীর সেই পর্ব, যেখানে তিনি সবিস্তারে তুলে ধরেছেন তাঁর শৈশব ও কৈশোরকালের কথা। কী বিচিত্র আর বর্ণাঢ্য সেই জীবন! লেখকের চোখ দিয়ে নিজের জীবনকে সৈয়দ হক কীভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন—বিশেষত কৈশোরকালের ঘটনাগুলো—পড়লে শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। পাশাপাশি বোঝা যায় লেখকের জন্ম-পরবর্তী কালগত পরিসর এবং ইতিহাসকেও।
শুরুতে সামান্য ভণিতা করার পরেই সৈয়দ হক জানাচ্ছেন, ‘পেছন ফিরে সেই বালকটিকে আমি দেখতে পাই। কতই-বা তার বয়স, আট কি নয়। বাইরে তখন দুর্ভিক্ষ, পঞ্চাশের মন্বন্তর।’ তারপরেই অকপট স্বীকারোক্তির স্বর, ‘বালক সে বালকই তখন—দুর্ভিক্ষের কোনো বোধ নেই বালকটির। এক বেলা যে ছোলাসেদ্ধ খেয়ে থাকতে হচ্ছে, এ-ও যেন তার কাছে বনভোজন। আরেক বেলা রেশনের আউলে ওঠা চাল মা যে বেশ করে পানি দিয়ে ঢলঢলে গলা ভাত করছেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালের রেশনের সেই চালও বালকের নাকে দুর্গন্ধ দিচ্ছে না, ওয়াক উঠছে না।’ জীবনে প্রথম ভাতের বদলে রুটিও খাচ্ছে, দেখছে কুড়িগ্রাম শহরের ঈদগা মাঠে লঙ্গরখানার ভোজ, একবার সে কলার পাত পেতে সেই লঙ্গরখানার ভোজে বসে খেয়েছিল ‘হলুদ ঢলঢলে খিচুড়ি’।
অনুপম ভাষায় লেখক লিখছেন তাঁর ও বাবা আর ইদ্রিস চাচার কথা। বাবা ত্যাজ্যপুত্র কেন হলেন, লিখেছেন তাও। কেন তাঁর বাবার এলোপ্যাথি ডাক্তার হওয়া হলো না, হলেন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, পাশাপাশি কবিরাজি চিকিৎসাও চালিয়েছেন আমৃত্যু—এও জানাতে ভোলেননি।
একদা যে বাবা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করছেন, পরে সৈয়দ হকের পিতা সে বাবার নামেই কুড়িগ্রাম শহরে খুলছেন হোমিও চিকিৎসাব্যবস্থা শিক্ষার কলেজ। লেখক জানাচ্ছেন, ‘বাবার সেই দূর-দূরান্তে রোগী দেখতে যাওয়া, গভীর রাতে ফিরে আসা, তাঁর মুখে অবিরাম সেই সব গল্প—যখন তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন আসাম, ভাঙছেন পাহাড়, আমার মনে হাওয়া আনত দূরে যাবার, কুড়িগ্রামে বন্দী থেকেও মনে মনে তাঁর মতো আমিও এক পর্যটক হয়ে উঠতাম।’
হে বৃদ্ধ সময় সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনীর সেই পর্ব, যেখানে তিনি সবিস্তারে তুলে ধরেছেন তাঁর শৈশব ও কৈশোরকালের কথা। কী বিচিত্র আর বর্ণাঢ্য সেই জীবন! লেখকের চোখ দিয়ে নিজের জীবনকে সৈয়দ হক কীভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন—বিশেষত কৈশোরকালের ঘটনাগুলো—পড়লে শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। পাশাপাশি বোঝা যায় লেখকের জন্ম-পরবর্তী কালগত পরিসর এবং ইতিহাসকেও।
শুরুতে সামান্য ভণিতা করার পরেই সৈয়দ হক জানাচ্ছেন, ‘পেছন ফিরে সেই বালকটিকে আমি দেখতে পাই। কতই-বা তার বয়স, আট কি নয়। বাইরে তখন দুর্ভিক্ষ, পঞ্চাশের মন্বন্তর।’ তারপরেই অকপট স্বীকারোক্তির স্বর, ‘বালক সে বালকই তখন—দুর্ভিক্ষের কোনো বোধ নেই বালকটির। এক বেলা যে ছোলাসেদ্ধ খেয়ে থাকতে হচ্ছে, এ-ও যেন তার কাছে বনভোজন। আরেক বেলা রেশনের আউলে ওঠা চাল মা যে বেশ করে পানি দিয়ে ঢলঢলে গলা ভাত করছেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালের রেশনের সেই চালও বালকের নাকে দুর্গন্ধ দিচ্ছে না, ওয়াক উঠছে না।’ জীবনে প্রথম ভাতের বদলে রুটিও খাচ্ছে, দেখছে কুড়িগ্রাম শহরের ঈদগা মাঠে লঙ্গরখানার ভোজ, একবার সে কলার পাত পেতে সেই লঙ্গরখানার ভোজে বসে খেয়েছিল ‘হলুদ ঢলঢলে খিচুড়ি’।
অনুপম ভাষায় লেখক লিখছেন তাঁর ও বাবা আর ইদ্রিস চাচার কথা। বাবা ত্যাজ্যপুত্র কেন হলেন, লিখেছেন তাও। কেন তাঁর বাবার এলোপ্যাথি ডাক্তার হওয়া হলো না, হলেন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, পাশাপাশি কবিরাজি চিকিৎসাও চালিয়েছেন আমৃত্যু—এও জানাতে ভোলেননি।
একদা যে বাবা তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করছেন, পরে সৈয়দ হকের পিতা সে বাবার নামেই কুড়িগ্রাম শহরে খুলছেন হোমিও চিকিৎসাব্যবস্থা শিক্ষার কলেজ। লেখক জানাচ্ছেন, ‘বাবার সেই দূর-দূরান্তে রোগী দেখতে যাওয়া, গভীর রাতে ফিরে আসা, তাঁর মুখে অবিরাম সেই সব গল্প—যখন তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন আসাম, ভাঙছেন পাহাড়, আমার মনে হাওয়া আনত দূরে যাবার, কুড়িগ্রামে বন্দী থেকেও মনে মনে তাঁর মতো আমিও এক পর্যটক হয়ে উঠতাম।’
আগেই বলেছি, খুবই বিচিত্র সৈয়দ হকের শৈশব ও কৈশোর। গোরা সৈন্যদের যেমন বেশ্যাপাড়ার পথ চেনাতে হয় তাঁকে, তেমনি প্রভাত বাবুর আমেরিকান স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান পমের কাছ থেকে পাওয়া ইংরেজি গল্পের বই ও পাখির পালক তাঁর কাছে হয়ে ওঠে ‘সাত-রাজার ধন’। বিপিন তাঁর ক্লাসের আরেক সহপাঠী, স্বভাবে যে গম্ভীর। থাকে একলা একটি ঘরে। লেখক পরে জানতে পারেন, এক বারবনিতার ছেলে সে। মায়ের রোজগারেই চলে ওর পড়াশোনা।
বইটি শেষ হয়েছে লেখকের মীর নানার উপাখ্যান দিয়ে। মীর নানা সংসার থেকে আলাদা হয়ে এমন এক উপাসনার জগৎ বেছে নিয়েছেন, যেখানে পূজিত হন বিশ্বের প্রতিটি বড় ধর্মের প্রবক্তারা। বইয়ের একেবারে অন্তিমে সৈয়দ হক বলেন, ‘যিশু মোহাম্মদ বুদ্ধ কাউকে আমি ফেলে দিতে পারি না। সবাই আমার কাছে এক মানুষ হয়ে ওঠেন।...আমি মনে মনে বলি, একদিন আমি কুড়িগ্রাম থেকে যেখানেই যাই, যাবই তো!—সেই দেশে মাঠ নিশ্চয় পাব এই বাংলার মতো, সেখানেই অমন একটা মাটির বেদি মীর নানার মতো আমিও গড়ে নেব।’


Comments
Post a Comment