নয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ চূড়ান্ত
- Get link
- X
- Other Apps
নয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ চূড়ান্ত
মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগে নয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক খান জানান, অভিযুক্ত নয়জনের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অন্য তিনজন পলাতক।
সানাউল হক খান বলেন, এই নয়জনের বিরুদ্ধে ১০১ জনকে হত্যা, ১৩ জনকে গুরুতর আহত করা, ১১২টি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ও এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। ৪২৯ পৃষ্ঠার এ তদন্ত প্রতিবেদনে ৫২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গত বছরের ১৭ মে এ তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থার রুহুল আমিন।
সংবাদ সম্মেলনে পলাতক তিনজনের নাম প্রকাশ না করা হলেও গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই ছয়জন হলেন মুক্তাগাছা উপজেলার কুড়িপাড়া গ্রামের আবদুস সালাম (৭৫) (আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক), একই উপজেলার ফকিরবাড়ি গ্রামের সুরুজ আলী ফকির (৬২) (রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের সমর্থক), শসাকান্দাপাড়া গ্রামের জয়েন উদ্দিন ফারুকী ওরফে জয়নাল মৌলভী (৬০) (রাজাকার বাহিনীর এই সদস্য বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক), কলাকান্দা গ্রামের আবদুর রহিম ওরফে আবদুর রহিম মাস্টার ওরফে নূর বিএসসি (৬৭) (রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন), বারকাহনিয়া গ্রামের রোস্তম আলী (৭০) (রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন) এবং কোতোয়ালি থানার নিমতলা গ্রামের জালাল উদ্দিন (৫৯) (রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন)।
এর মধ্যে বারকাহনিয়া গ্রামের রোস্তম আলী এই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন। বাকি পাঁচজন গ্রেপ্তার হন গত বছরের ৮ আগস্ট।
নয়জনের বিরুদ্ধে যে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে
১৯৭১ সালের ২ আগস্ট মুক্তাগাছার বিনোদবাড়ি মানকোন গ্রামের জিতেন্দ্র প্রসাদ ঠাকুরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকেসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আবদুস সালামসহ আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
১৯৭১ সালের ২ আগস্ট আবদুস সালাম আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মুক্তাগাছার বিনোদবাড়ির মানকোন গ্রামের আদর আলী মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালান। সেখানকার নিরস্ত্র খালেতন নেছাসহ সাতজনকে হত্যা করেন। আবদুল হাই ওরফে জবা এবং রাহাতন নেছাকে গুরুতর জখম করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তাজউদ্দিনের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
১৯৭১ সালের ২ আগস্ট আবদুস সালাম আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মুক্তাগাছার দড়ি কৃষ্ণপুর গ্রামে সাবেক স্পিকার শামসুল হুদার বাড়িতে হামলা চালিয়ে নজরুল ইসলামসহ আটজনকে হত্যা করেন। একই গ্রামের ইমান ক্বারীর বাড়িতে হামলা করে হাবিবুরসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করেন। একই দিন নাজিমউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী আমেনাকে গুলি করে হত্যা করেন।
১৯৭১ সালের ২ আগস্ট আবদুস সালাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মুক্তাগাছার দড়ি কৃষ্ণপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার রহমত আলীর বাড়ি ঘেরাও করেন। পরে রহমত আলীসহ ১৯ জনকে ওই বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়।
রাজাকার শমসের ফকির ওরফে শমসের মৌলভী ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট আলবদর, রাজকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মুক্তাগাছার মির্জাকান্দা কাতলশার গ্রামে হামলা চালিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেন। ওই গ্রামের ৩৫ থেকে ৪০ জন বাসিন্দাকে ধরে নিয়ে পার্শ্ববতী কয়া বিলের পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। এতে হাসেন আলীসহ ২৮ থেকে ৩০ জন নিহত হন। সোহরাব আলীসহ ছয়-সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
রাজাকার জয়েন উদ্দিন ফারুকীসহ অন্যরা ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট পাকিস্তান সেনবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কোতোয়ালি থানার কবিরপুর গ্রামে হামলা চালান। ওই গ্রামের যোগেন্দ্র চন্দ্র করসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ছাড়া নিতাই চন্দ্র দাসসহ ১০ থেকে ১২ জনকে গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে মুক্তাগাছার বারকাহনিয়া গ্রামের হানের ঘাটে গুলি করে হত্যা করেন।
১৯৭১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাজাকার জয়েন উদ্দিন ও অন্য রাজাকারেরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মুক্তাগাছার বিরাশি পূর্বপাড়া গ্রামে হামলা চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা ও আশ্রয় দেওয়ার কারণে ৩০ থেকে ৩৫টি বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। জয়েন উদ্দিন ওই গ্রামের একজন নারীকে পার্শ্ববর্তী জালাল উদ্দিনের রান্নাঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
১৯৭১ সালের ১২ অক্টোবর রাজাকার জয়েন উদ্দিন ফারুকী ও অন্য রাজাকারেরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মুক্তাগাছার শসানিচ গ্রামে হামলা চালান। গ্রামের নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ধরে নিয়ে আইনজীবী অভিমন্যু দাসের বাড়িতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করান। রাজাকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা একযোগে তাঁদের গুলি করে গণহত্যা চালায়। এতে পূর্ণচন্দ্র দেসহ ১৩ জন নিহত হন। আইনজীবী অভিমন্যু দাস ও নিরঞ্জন নন্দী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে আইনজীবী অভিমন্যু দাস মারা যান।
১৯৭১ সালের ২ আগস্ট মুক্তাগাছার বিনোদবাড়ি মানকোন গ্রামের জিতেন্দ্র প্রসাদ ঠাকুরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকেসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আবদুস সালামসহ আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment