ট্রাম্পের পরের লক্ষ্য বিচারপতি

           ট্রাম্পের পরের লক্ষ্য বিচারপতি



মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপিএখন পর্যন্ত এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে সফল দাবি করতে পারেন। উল্টো একের পর এক বিপর্যয়ে দেশ শাসনে তাঁর প্রস্তুতি ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার ওপর রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর ক্যাম্পেইন সদস্যদের সম্ভাব্য যোগসাজশ নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) ও কংগ্রেসের তদন্ত।
এমন পরিস্থিতিতে বিজয় পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর এমন বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্প এর মধ্যে কলোরাডোর ফেডারেল আপিল আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক নীল গরসাচকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কোনো পক্ষ থেকেই প্রশ্ন ওঠেনি। রক্ষণশীলরা তাঁর ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী, কারণ বিচারক হিসেবে তিনি সাবেক বিচারপতি স্কালিয়ার মতোই কঠোর নিয়মতান্ত্রিক। তিনি শাসনতন্ত্র আক্ষরিকভাবে অনুসরণের পক্ষে।
স্কালিয়ার আকস্মিক মৃত্যুর ফলে সুপ্রিম কোর্টে যে শূন্য পদের সৃষ্টি হয়, সেখানেই গরসাচ বসতে চাইছেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে অনেকে আপত্তি তুলেছেন আপিল আদালতে গরসাচের বেশির ভাগ রায় ক্ষমতাবানদের পক্ষে গেছে। গর্ভপাতের প্রশ্নেও তিনি ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টির মতো নারীদের হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছেড়ে দেওয়ার বদলে সরকারি নিয়ম করে তা নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী। নির্বাচনে অবাধ অর্থের প্রবেশেও তাঁর সমর্থন রয়েছে।
বিচারপতি হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হলে গরসাচকে মার্কিন সিনেটের কমপক্ষে ৬০ জন সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে এই নিয়ম এখন পর্যন্ত চালু আছে। নিম্নতম আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়, অর্থাৎ ৫১টি ভোটে এই মনোনয়ন নিশ্চিত করা যায়। প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় রিপাবলিকানদের বিরোধিতা এড়াতে ডেমোক্র্যাটরাই ৬০ জনের নিয়ম বদলে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিয়ম চালু করেছিল। তবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সুপ্রিম কোর্টের জন্য এই নিয়ম তাঁরা পরিবর্তন করেনি।
মার্কিন সিনেট এই মুহূর্তে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তাঁদের হাতে রয়েছে মোট ৫২টি ভোট। ৬০ এর বেড়া পার হতে তাঁদের ডেমোক্র্যাটদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহজে বিজয় এনে দিতে চান না। এর আগে ওবামা তাঁর শেষ বছরে মধ্যপন্থী বিচারক মেরিক গ্যারল্যান্ডকে স্কালিয়ার শূন্য স্থানে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ওবামার মেয়াদ শেষ হতে পুরো এক বছর বাকি ছিল। তা সত্ত্বেও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেট গ্যারল্যান্ডের মনোনয়ন আমলে আনার প্রয়োজন দেখেনি। ডেমোক্র্যাটদের এখানেই প্রধান আপত্তি।
ট্রাম্পের আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিজয় ডেমোক্রেটিক পার্টি ও দলের সমর্থকদের দারুণভাবে হতাশ করেছে। দলের নেতৃত্বে কেউ কেউ রিপাবলিকানদের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রস্তুত থাকলেও দলের সমর্থকদের বড় অংশ ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে কোনো রকম সহযোগিতায় অনাগ্রহী। জনমত জরিপ অনুসারে, জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের সমর্থনের পরিমাণ এই মুহূর্তে মাত্র ৩৭ শতাংশ।
ডেমোক্রেটিক সিনেটরদের মাত্র দুজন-ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার জো মানশিন ও নর্থ ডাকোটার হাইডি হাইট ক্যাম্প জানিয়েছেন তাঁরা গরসাচের মনোনয়নের প্রস্তাব সমর্থন করবেন। এঁরা দুজনেই রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্য থেকে এসেছেন। ২০১৮ সালে তাঁদের পুনর্নির্বাচনে কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আরও দু-একজন ডেমোক্রেটিক সিনেটর তাঁদের মনোভাব বদলে গরসাচের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু ৬০ সংখ্যায় পৌঁছাতে হলে দরকার মোট আটজন ডেমোক্রেটিক সিনেটরের সমর্থন। সেই সংখ্যায় পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।
সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে সিনেটের নিয়মবিধি তিনি পরিবর্তন করবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই পরিবর্তনের পক্ষে। কিন্তু ম্যাককনেল জানেন তাঁর পূর্বসূরি সিনেটর হ্যারি রিড সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে পরিবর্তন করেননি। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করাটাই শেষ কথা নয়। বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিক চান, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সমর্থন থাকুক।
আগামী সপ্তাহের কোনো এক সময়ে গরসাচের নিয়োগের প্রশ্নে ভোট গ্রহণের কথা।

Comments

Popular posts from this blog

হস্তমৈথুনের ফলে কতো ক্যালোরী খরচ হয় ?

সাক্ষাৎকার : হাসান আজিজুল হক ‘আমি আমার শেষ নিয়ে ভাবছি না’