রাশিয়ায় পাতালরেলে হামলা


রাশিয়ায় পাতালরেলে হামলা


*সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের পাতালরেলে একটি ট্রেনের কামরায় বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবারের এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ।
সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের গভর্নর জর্জি পোলতাভেচঙ্কোকে উদ্ধৃত করে রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটার দিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। তবে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই ব্যক্তির খোঁজে অভিযান শুরু করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ। ঘটনার আগে পর্যবেক্ষণ ক্যামেরায় ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
ট্রেনের একটি কামরায় বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ট্রেনটি তখন সেনায়া পোলোশচাদ স্টেশন ও টেকনোলজিস্কি ইনস্টিটিউট স্টেশনের মাঝামাঝি অবস্থানে ছিল। দুটো স্টেশনই শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
রাশিয়ার জাতীয় সন্ত্রাসবাদ দমন সংস্থা বলেছে, সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের আরেকটি রেলস্টেশনের কাছে একটি বোমাসদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে। তা নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, ট্রেনটির চালকের কারণে বহু জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। বিস্ফোরণের পরও তিনি ট্রেন না থামিয়ে স্টেশন পর্যন্ত চালিয়েছেন। ফলে অনেক যাত্রী স্টেশনে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন।
বিস্ফোরণের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, হামলার পর পুতিন সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর ছাড়েন। বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে পুতিন বলেছেন, বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের সন্দেহকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
তবে রুশ প্রধানমন্ত্রী এক ফেসবুক বার্তায় এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিস্ফোরণের পর সেন্ট পিটার্সবার্গের পাতালরেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে মস্কো মেট্রোর কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। সেন্ট পিটার্সবার্গের গভর্নর নগরীর বাসিন্দা এবং পর্যটকদের সতর্ক ও নিরাপদে থাকার অনুরোধ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারিত বিস্ফোরণের ঘটনার ছবিতে দেখা যায়, রেলস্টেশনে দাঁড়ানো ট্রেনটির একটি কামরার দরজা উড়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ট্রেনটির অংশবিশেষ। প্ল্যাটফর্মে পড়ে আছেন হতাহত ব্যক্তিরা। ছেয়ে আছে ধোঁয়ায়। ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে পালাচ্ছে।
বিস্ফোরণের পরপরই জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। অ্যাম্বুলেন্সে করে হতাহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন পাতালরেল স্টেশনের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছিল। ঘটনাস্থলে কাউকে ভিড়তে দেওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে ‘ভয়াবহ ঘটনা’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। হামলার পর ফ্রান্সের প্যারিসে পাতালরেলের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার মুসলিমপ্রধান চেচনিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে রাশিয়া। ভ্লাদিমির পুতিন ১৯৯৯ সাল থেকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলে দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাশিয়ায় পাতালরেল-ব্যবস্থা এর আগেও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। ২০১০ সালে রাজধানী মস্কোতে দুজন নারীর আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৩৮ জন মারা যান।
২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তিনটি পাতালরেল স্টেশন ও একটি দ্বিতল বাসে সন্ত্রাসী হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত হয়৷ গত বছরের মার্চে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে বিমানবন্দর ও পাতালরেলে হামলায় বহু লোক হতাহত হন। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে।

Comments

Popular posts from this blog

হস্তমৈথুনের ফলে কতো ক্যালোরী খরচ হয় ?