সাত বছর পর সম্মেলন আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবার আঞ্চলিকতামুক্ত হবে?

সাত বছর পর সম্মেলন আজ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এবার আঞ্চলিকতামুক্ত হবে?


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের এলাকা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের ব্যানার–ফেস্টুনে ভরে গেছে l প্রথম আলোইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের এলাকা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের ব্যানার–ফেস্টুনে ভরে গেছে l প্রথম আলোসাত বছর পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পদগুলোর দৌড়ে এগিয়ে আছেন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে বাড়ি, এমন নেতারাই। ফলে এবারও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আঞ্চলিকতামুক্ত হতে পারবে কি না, সংশয় প্রকাশ করছেন নেতা-কর্মীরা।
জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহজাহান আলম (সাজু) প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রগতিশীল আন্দোলন টিকিয়ে রাখতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক, সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব আসা খুবই প্রয়োজন। চাকরি বা সুবিধা নিতে যাওয়া নেতৃত্বকে দূরে রাখতে হবে।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটিতে শীর্ষ পদে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। সভাপতি কুষ্টিয়ার হলে, সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহের অথবা এর উল্টোটা হয়।
এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত ৪৮ জন নেতা-কর্মী মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন জুয়েল রানা, বিপ্লব কর্মকার, আনিচুর রহমান, শাহিনুর রহমান, জামিলুর রেজা, ফাহিমুর রহমান, সজিবুল ইসলাম ও তৌকির মাহফুজ। তাঁরা সবাই ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। তাঁদের কারও কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র, বাস পোড়ানো ও শিক্ষককে মারধরের মামলা আছে।
বর্তমান কমিটির নাট্য বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক ইসমেত জেরিন বলেন, নতুন কমিটি আঞ্চলিকতার প্রভাবমুক্ত করা হোক। মেধাবী, সৃষ্টিশীল, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত, দক্ষ ও প্রগতিশীলমনা ব্যক্তিদের দলীয় শীর্ষ পদে নেওয়া হোক। কমিটিতে নারীদের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কোনো অনুষ্ঠান বা মিছিলে সামনে ব্যানার ধরতে নারীদের রাখা হয়।
সভাপতির পদপ্রত্যাশী একমাত্র নারী হিসেবে এবার রিপা খাতুন ফরম নিয়েছেন। তিনি বলেন, যাঁর অতীত ভালো, যাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, টেন্ডারবাজিতে জড়িত নন, এমন নেতা নির্বাচিত করা খুবই প্রয়োজন। কেননা, যাঁরা এখন পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কমবেশি অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক চর্চা করার মতো নেতা পাওয়া খুবই কঠিন।
বর্তমান ও সাবেক পাঁচজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাম্পাসে যাঁরা নেতা হন, তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে ও দুই জেলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে কাজ করেন। তাঁদের নিজস্ব কোনো বলয় থাকে না। গত আট বছরের মধ্যে যাঁরা কমিটিতে ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া গত তিন বছরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নিজস্ব উদ্যোগে কোনো কর্মসূচি করতে দেখা যায়নি। কেন্দ্রঘোষিত মিছিল থাকলে তা দায়সারাভাবে করা হয়েছে। পদ পাওয়ার পর নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে সখ্য করে টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এমনিতেই ছাত্রশিবিরের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তাদের সঙ্গেও ছাত্রলীগ আঁতাত করে চলে।
এ প্রসঙ্গে বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, এমন কমিটি গঠন করা হোক যারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দাবি নিয়ে কথা বলবে, প্রশাসন বা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে আঁতাত নয়। একটা শক্তিশালী কমিটি হোক যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি তিন বছর আগে গঠিত হয়। তবে সম্মেলন করে নয়, সিলেকশনের মাধ্যমে। এতে সাইফুল ইসলামকে সভাপতি ও অমিত কুমার দাসকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন জাহাঙ্গীর হোসেনকে সভাপতি ও শামসুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
সম্মেলনে যাঁরা থাকছেন
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফকে। আওয়ামী লীগের অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনসহ কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
নতুন কমিটিতে জায়গা পেতে নেতা-কর্মীরা জোর তদবির ও দৌড়ঝাঁপ চালিয়েছেন। পাশাপাশি পুরো ক্যাম্পাস এখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানানো রঙিন ব্যানার, ফেস্টুনসহ বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণায় ছেয়ে গেছে।

Comments

Popular posts from this blog

হস্তমৈথুনের ফলে কতো ক্যালোরী খরচ হয় ?