স্বামীকে বশে আনতে দুটি সোনার মূর্তি, অতঃপর...




সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকেন স্বামী। এটা মেনে নিতে পারেননি স্ত্রী। এ কারণে স্বামীকে কাছে পেতে ব্যক্তিগত গাড়িচালকের পরামর্শ চান ওই নারী। স্বামীকে বশ করতে পারেন—এমন একজন কবিরাজকে নিয়ে একদিন হাজির হলেন গাড়িচালক।
কবিরাজ সবকিছু শুনে ওই নারীকে বলেন, তাবিজ করলে স্বামী তাঁকে আগের মতো ভালোবাসবেন। কিন্তু এর জন্য খাঁটি সোনার দুটি মূর্তি তৈরি করতে হবে। স্বামীকে বশে আনতে মরিয়া ওই নারী ২১ লাখ টাকা খরচ করে তৈরি করেন সোনার দুটি মূর্তি। এরপর তাবিজ দেওয়ার কথা বলে কবিরাজ আর সেই গাড়িচালক বাসায় গিয়ে নারীকে অচেতন করে সোনার মূর্তি নিয়ে পালিয়ে যান।
রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানায় গতকাল শনিবার করা মামলার এজাহারে এক নারী এসব কথা উল্লেখ করেছেন। মামলায় কবিরাজ ও নিজের গাড়িচালককে আসামি করেছেন ওই নারী। এ মামলায় আবদুল মোতালেব নামের ওই কবিরাজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাঁকে আজ রোববার তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গেন্ডারিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল বড়াল প্রথম আলোকে বলেন, ভণ্ড কবিরাজ মোতালেব আসলে একজন আদম ব্যবসায়ী। ওই গাড়িচালক ও কবিরাজ কয়েক লাখ টাকার সোনা হাতিয়ে নিয়েছেন। এর আগে মোতালেব বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
তবে মোতালেবের আইনজীবী আশরাফ জালাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি অস্বাভাবিক। ঘটনা নভেম্বরের হলেও শনিবার মামলা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তাঁর মক্কেল পরিস্থিতির শিকার।
আদালত ও পুলিশ সূত্র বলছে, দুই বছর আগে ৩০ বছর বয়সী ওই নারীর সঙ্গে জয়নাল আবেদিন নামের এক ব্যবসায়ীর বিয়ে হয়। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে জয়নাল প্রায় বিদেশে থাকতেন। বিয়ের কয়েক মাস পর ওই নারীর সঙ্গে জয়নালের সম্পর্কের অবনতি হয়। এ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন ওই নারী। একপর্যায়ে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইদ্রিস আলীর পরামর্শ চান। ইদ্রিস তাঁকে বলেন, তাঁর পরিচিত এক কবিরাজ আছেন। তিনি তাবিজ করে দিলে স্বামী তাঁকে আগের মতো ভালোবাসবেন। গত বছরের ২৬ অক্টোবর ইদ্রিস কবিরাজ মোতালেবকে গেন্ডারিয়ায় ওই নারীর বাসায় নিয়ে যান।
মামলার এজাহারে ওই নারী বলেছেন, গত বছরের ২৬ অক্টোবর কবিরাজের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি তাঁকে বিশ্বাস করে ফেলেন। এরপর কবিরাজ তাবিজ-কবচ ও পানি পড়া নিয়ে কয়েকবার তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন। গত নভেম্বরে মোবাইল ফোনে কবিরাজ মোতালেব তাঁকে বলেন, তদবির করাতে হলে ৫০ ভরি ওজনের ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে হবে। ওই সোনা দিয়ে ছেলে ও মেয়ের দুটি পুতুল তৈরি করতে হবে। মূর্তি দুটির ওজন হতে হবে ৪০ ভরি। এ ছাড়া এক ভরি ওজনের ৫টি সোনার তারকাঁটা ও ১০টি সোনার কয়েনও তৈরি করতে হবে। কবিরাজের কথামতো তিনি ২১ লাখ টাকা দিয়ে তাঁতীবাজার থেকে ৫০ ভরি সোনা কিনে মূর্তি, তারকাঁটা ও কয়েন তৈরি করে নেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গত ১৭ নভেম্বর মোতালেব পাঁচজন সহকারী নিয়ে গেন্ডারিয়ায় ওই নারীর ফ্ল্যাটে যান। এ সময় তাঁদের সঙ্গে কাঠের তৈরি ছোট একটি ঘর ছিল। বুদ্ধি করে কাঠের ওই ছোট ঘরে সোনার তৈরি মূর্তি, তারকাঁটা ও কয়েন ঢুকিয়ে নেন মোতালেব। পরে সোনাসহ ওই ছোট্ট ঘরটি নারীর শোবার ঘরে রাখেন। এরপর ওই নারীকে চিরতার পানি খাওয়ানোর পরপরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এই সুযোগে সোনার তৈরি জিনিসপত্রসহ ওই নারীর আরও সোনা-গয়না চুরি করে পালিয়ে যান কবিরাজ ও তাঁর সহকারীরা।
তদন্ত কর্মকর্তা কমল বড়াল বলেন, সোনার মূর্তিসহ ওই নারীর ঘর থেকে ৭৮ ভরি সোনা চুরি করেছেন কবিরাজ মোতালেব। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ৩২ লাখ টাকার সোনা চুরি করার কথা স্বীকার করেছেন। মোতালেব এখন পুলিশ হেফাজতে। গাড়িচালক ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
কমল বড়াল বলেন, মামলা করার সময় ওই নারীর সঙ্গে তাঁর স্বামী জয়নাল আবেদিনও থানায় এসেছিলেন।

Comments

Popular posts from this blog

হস্তমৈথুনের ফলে কতো ক্যালোরী খরচ হয় ?