পারমাণবিক অস্ত্র ভারত প্রথম আঘাতের নীতি নেবে!


পারমাণবিক অস্ত্র

ভারত প্রথম আঘাতের নীতি নেবে!

তবে শুধু এই কথা থেকে এটা প্রমাণিত হয় না যে ভারতের নীতিগত পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ঘটনাপ্রবাহ থেকে বোঝা যায়, ভারত হয় নীরবে কৌশলগত সুযোগের পরিসর বাড়াচ্ছে অথবা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষের রাশ টেনে ধরার চেষ্টা করছে।
পারমাণবিক হামলায় ভারতকে টিকে থাকতে হলে তাকে ব্যাপক প্রতিশোধ নিতে হবে। খুব সম্ভব এর জন্য তাকে প্রতিপক্ষের শহরে হামলা চালাতে হবে। ২০০৩ সালে ভারত যখন এই নীতি প্রণয়ন করে, তখন তা ঠিক ছিল। কারণ, ওই সময় পাকিস্তানের হাতে শহরবিধ্বংসী দূরপাল্লার অস্ত্র ছিল। কিন্তু তারপর পাকিস্তান যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ছোট ছোট ওয়ারহেড বানায়। এগুলো পাকিস্তানের ভারত সমস্যা মোকাবিলার জন্য করা হয়েছিল। তবে ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বড়। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হলে ভারতের জয় কার্যত নিশ্চিত।
ভারত আক্রমণ করলে অগ্রসরমাণ সেনাদের থামাতে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। অন্তত যুদ্ধে হারার আগে তারা সেটা থামাতে চায়। ভারতের নীতিতে যে ফাঁক আছে, এতে সেটা ব্যবহারের চেষ্টা করা যাবে। এটা কল্পনা করা কঠিন যে ভারত পাকিস্তানের মাটিতে ছোটখাটো হামলা না করে পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
এতে ভারতের জন্য পাকিস্তান সমস্যা সৃষ্টি করছে। কারণ, তার প্রধান শত্রু পাকিস্তান স্বল্প পরিসরে হলেও পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তখন থেকেই ভারতের নীতিগত অবস্থান বদলাতে বিতর্ক যে বাড়ছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের পারমাণবিক কমান্ডের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল বি এস নাগাল ২০১৪ সালে লিখিত এক নিবন্ধে যুক্তি দিয়েছিলেন, ভারত নিবৃত্তিমূলক পারমাণবিক হামলা করবে কি না, তা নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’ রাখা উচিত। সে বছর ভারতীয় জনতা পার্টিও বলেছিল, তারা এ-বিষয়ক নীতি পরিবর্তনের ব্যাপারটা বিবেচনা করবে। কয়েক সপ্তাহ পর তারা ক্ষমতায় আসে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে তখনকার ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর বলেছিলেন, প্রথম হামলার ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা ভারতের হাত–পা বেঁধে দিয়েছে। যদিও তিনি বলেন, এটা শুধুই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। পরিবর্তন যে আসছে, বিশ্লেষকদের তা সন্দেহ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে, প্রথম দিকে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, সেটা তুলে নিতে তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছে। তবে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে ট্রাম্প অতটা কড়া অবস্থানে না থাকায় এটা আর প্রযোজ্য না-ও হতে পারে।
এটা সারা পৃথিবীর জন্যই উদ্বেগজনক। ২০০৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ভারত-পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র বেশি না থাকলেও পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে পরিবেশ কালো ও গরম ধোঁয়ায় ভরে যাবে। সারা পৃথিবীতে এমনিতেই শস্যের উৎপাদন কমছে। এতে যে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে, তাতে শত কোটি মানুষ মারা পড়বে, ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে।
একটা ব্যাপার, পাকিস্তানি নেতারা প্রথাগত যুদ্ধকেও অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করেন। ফলে তাঁরা পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে আরও আগ্রহ দেখাতে পারেন। আরেকটি ব্যাপার, ভারতে বড় বড় সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। এতে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। ওদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের বিতর্কিত ভূমিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত কখনো কখনো উপচে পড়ে। এটাও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে।
নারাং বলেছেন, ‘হয়তো এটা রিগ্যানের জমানার কৌশল।’ অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে রিগ্যানের অস্ত্র প্রতিযোগিতার তুলনা করেছেন তিনি। ‘কিন্তু পাকিস্তানের নিরাপত্তা সমস্যা সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে অনেক গুরুতর। যে কারণে খুব দ্রুত অনাকাঙ্ক্ষিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।’
ইংরেজি থেকে অনূদিত, নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া।
ম্যাক্স ফিশারওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিক

Comments

Popular posts from this blog

হস্তমৈথুনের ফলে কতো ক্যালোরী খরচ হয় ?