এই সব অনলাইন লইয়া আমরা কী করিব?

এই সব অনলাইন লইয়া আমরা কী করিব?


ঢাকার পাঠাগারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র পিছিয়ে‌—আমার এ রকম একটি প্রতিবেদন অতি সম্প্রতি ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর ৫ নম্বর পাতায়। প্রকাশের পরদিন কৌতূহলবশত শিরোনামটি লিখে গুগলে সার্চ দিতেই দেখি, বেশ কয়েকটি কথিত অনলাইন পোর্টালেও খবরটি বেরিয়েছে! কেবল আমার নামটি নেই, তা ছাড়া দাঁড়ি-কমাসহ রিপোর্ট হুবহু রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাবিষয়ক খবরাখবর দেয়—এ রকম একটি অনলাইনের নামও বেশ ওপরের দিকে।
প্রতিদিন অসংখ্য প্রতিবেদক, লেখক এ রকম অভিজ্ঞতার স্বাদ পাচ্ছেন। অনেকে খবরও রাখেন না, কীভাবে তাঁর পরিশ্রমের মূল্যবান লেখাটি চুরি হয়ে যাচ্ছে।
নিজের কথা বলি। প্রতিবেদনটির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গত আট মাস ঢাকার পথে পথে ঘুরেছি। কতজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কত কথা হয়েছে। কত সকাল-সন্ধ্যা, শীত-বর্ষা গায়ে মেখেছি। আর সেই প্রতিবেদনটি এভাবে কপি হয়ে গেল!
এক সহকর্মীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করছিলাম। তিনি বললেন, দুঃখজনক এটুকু বলা ছাড়া কিছুই করার নেই। তাঁর ভাষায়, ‘যদিও বা নেবে, অন্তত ক্রেডিট স্বীকার করে সৌজন্য দেখাতে পারত।’
আমার মনে হয়, এ ধরনের সুযোগ থাকারও কোনো সুযোগ নেই। দিনের ঘটনা বা বিশেষ প্রতিবেদন, কোনো ক্ষেত্রেই সুযোগ নেই। আমার কষ্ট-পরিশ্রমের লেখাটি, ছবিটি আপনি কপি করতে পারেন না। আপনার কায়ক্লেশে তৈরি করা লেখাটিও আমি কপি করতে পারি না। একজনের অনেক টাকা বিনিয়োগ করে তৈরি করা ভিডিওটি আপনি কেন চুরি করবেন? এটা কোন ধরনের প্রতিযোগিতা? মেধা-শ্রম দিয়ে কেন আপনার উদ্যোগটি সফল করছেন না। কেন দু-তিনজন কর্মী নিয়ে সফল হওয়ার শর্টকাট উপায় খুঁজছেন?
বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা বড়জোর এক যুগের। এখন দেশে সংবাদভিত্তিক অনলাইনের সংখ্যা কত, এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারও জানা আছে বলে মনে হয় না। ২০ বা ৫০টা করে অনলাইন উপজেলা পর্যায়েই আছে। সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক এখন ঘরে ঘরে। অষ্টম শ্রেণি পাস, ম্যাট্রিক পাস, যে কেউ চাইলেই এখন অবলীলায় মালিক, সম্পাদক, প্রধান প্রতিবেদক হয়ে যেতে পারছেন।
অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে বলতে শুনেছি, ‘ডটকমে’র যন্ত্রণায় আর বাঁচা গেল না। বিশেষ করে কোনো নির্বাচনের সময়। ডটকমের লোকদের কার্ড দিতে দিতে কর্মকর্তারা পেরেশান!
সংখ্যা বেশি কি কম, তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, কপি-পেস্টের অনাচার নিয়ে। এ দেশে কতভাগ অনলাইন নিজস্ব কনটেন্ট দিয়ে চলে? বড়জোর পাঁচ ভাগ! বা আরও কম? এভাবে চলতে পারে না। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আমরা নিশ্চিত, দুনিয়ার আর কোনো দেশে এ রকম হাজারে-হাজারে কপি-পেস্ট অনলাইন পোর্টালের বাড়বাড়ন্ত নেই।
এ দেশে সাংবাদিকতায় ‘আন্ডারগ্রাউন্ড সাংবাদিকতা’ বলে একটা টার্ম চালু আছে। শুনেছি, ঢাকার পল্টন, ফকিরাপুল এলাকায় একটা-দুটো খুপরি অফিস থেকে ২০-২৫টা খবরের কাগজ বের হয়। সব কাগজে ছাপা হয় একই খবর। আগে ট্রেসিং পেপারের খরচা ছিল, এখন তা-ও নেই। একবার কেবল মেকআপ করলেই চলে। বদলানোর কষ্ট বলতে কেবল মাস্টহেড। চাঁদাবাজি, দুর্বৃ‌ত্তায়নে সমর্থনই এসব কথিত পত্রিকার উদ্দেশ্য।
বলার অপেক্ষা রাখে না, তারাই এখন তাদের থাবা বিস্তৃত করতে অনলাইন মাধ্যমকে ব্যবহার করছে। এই ‘তারা’ই ছড়িয়ে পড়ছে বিভাগ থেকে জেলা শহরে, উপজেলায়। ‘তারা’দের সংখ্যা বাড়ছে দিনকে দিন। স্পষ্ট করে বলা দরকার, অনেক অসৎ ব্যবসায়ী এই সব অনলাইন পোর্টাল টিকিয়ে রেখেছেন।
যাঁরা অসৎভাবে নিউজ পোর্টাল চালাচ্ছেন, তাঁরা অনেকের সঙ্গেই প্রতারণা করছেন। ১. নিজের সঙ্গে। ২. কর্মীদের সঙ্গে। ৩. পাঠকদের সঙ্গে। ৪. বিজ্ঞাপনদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে। ৫. সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে।
কোনো আইন বা বিধির কথা বলতে চাই না। নিজস্ববোধ, চেতনা না জাগলে আইন সব সময় কার্যকর ফল দেয় না। আবার আইন, নীতিমালার প্রয়োজনও আছে। কীভাবে এই সব অসৎ নিউজ পোর্টালের বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ভাবার জন্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ আছেন। নিশ্চয়ই তাঁদের চিন্তা আছে। যদি নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই বংশবৃদ্ধি রোধ করা যেত। আর তা করা গেলে কিছুটা শৃঙ্খলা হয়তো আসত। যেটার খুব দরকার পড়ছে।

Comments

Popular posts from this blog

হস্তমৈথুনের ফলে কতো ক্যালোরী খরচ হয় ?